নানা সমস্যায় জর্জরিত বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌবন্দর
প্রকাশিত: ২৪-১-২০২৩ দুপুর ৩:৩৪
বালাসীঘাট গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি নৌবন্দর। যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই ঘাটটি রেলওয়ের লোড-আনলোড ও যাত্রী পারাপারের স্টেশন হিসেবে এক সময় ব্যবহার করা হতো। এই ঘাট বা নৌবন্দরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশে পণ্য পরিবহন করা হতো। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশরা ফুলছড়ি তিস্তামুখ ঘাটকে তাদের বিভিন্ন পণ্য আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করত।
১৯৯০ সালের পরে নদীর নাব্য সংকটের কারণে ফেরি সেবাটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট হতে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে ফেরির সার্ভিস চালু করা হয়। তকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল ও যাত্রী পারাপারের জন্য যোগাযোগ গরতে এ ফেরি সার্ভিসটি চালু করে। এরপর থেকেই এ ঘাট দিয়ে সব সময়ে যাত্রী পারাপার, কৃষিপণ্য, পার সরবরাহসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন করা হতো। পরে নদীতে নাব্য সংকটের কারণে ২০০০ সালে এই রুটটি বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
তখন থেকেই এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ২২ বছর বন্ধ থাকার পর গত ২০২২ সালের ১ এপ্রিল গাইবান্ধার বালাশী থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌরুটে পরীক্ষামূলক ভাবে লঞ্চ সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এই নৌরুট সচল রাখতে উভয় পাশে ঘাটে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করে। টার্মিনাল দুটিতে পাইলট হাউস, পুলিশ ও আনসার ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস ভবন, ড্রাইভাররা যাত্রী ছাউনি, টয়লেটসহ ১১টি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে এই রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন এই রুটে ৪টি ছোট লঞ্চ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলাচল করার কধা থাকলেও এখন চলে প্রতিদিন একটা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল কতটা মুক্তিমুক্ত, তা এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। যেখানে বড় লঞ্চ ব্যবহার করে বাস, ট্রাক রেল পারাপার করার কথা, সেখানে ছোট লঞ্চ দিয়ে শুধু যাত্রী পারাপার হওয়ায় এ এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে হতাশা লক্ষ করা গেছে। এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ এই নৌরুটটি বন্ধ করে দেয়ার পরও তাদের ষ্টিমার গুলো দীর্ঘদিন বালাশীঘাটের অদূরে নোঙর করে রাখে। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মনে আশা ছিল যে, এই নৌরুটটি আবারও চালু হবে। চালু হলে আনকেরই আবার কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তাদের ফেরিসহ পণ্যগুলো বিক্রি করে দেয়ায় শেষ আশাটাও শেষ হয়ে যায়।
বালাশীঘাট এলাকার বাসিন্দা লিপন বাবু নামের একজনের সাথে কথা হলে। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলার দেখেছি এই ঘাটে অনেক মানুষের সমাগম। এছাড়াও একটি ট্রেন সারা দিন থাকত ফেরি আশার জন্য। রেলফেরি এলে সেই ফেরির যাত্রী নিয়ে চলে যেত ট্রেন। এমনভাবে সারা দিন পণ্যবাহী কয়েকটি ট্রেন আসত এই ঘাটে এবং সেই ট্রেনগুলো ফেরির মাধ্যমে পার হতো। আমাদের বাপ-চাচারা এসব ট্রেন ও রেলফেরিতে বিভিন্ন পণ্য ও খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু অনেক দিন এই রুটে ফেরি বন্ধ থাকায় তারা আজ বেকার।
এই নৌরুট ব্যবহার করে মেলানদহ যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষারত যাত্রীর বেবী বেগম (৫৫) সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, আমরা আগে এই ঘাট দিয়ে নিরাপদে পারাপার হতাম ট্রেনের যাত্রী হিসেবে রেলফেরিতে করে। বর্তমানে কয়েকটি ছোট লঞ্চ চলাচল করলেও মাঝে মধ্যে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বন্ধ থাকে। এ কারণে আমাদের অনেক দুর হেটে গিয়ে নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই নদী পারাপার হতে হয়।
এই ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, এই নৌরুটটি একসময় উত্তরবঙ্গের হতে ৮ জেলার মানুষ ব্যবহার করত। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারনে এখন বন্ধ অনেক পথ পায়ে হেটে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।