‘হামদ নাত, ক্লাসিকাল গাইলেও রুক্সিকে সবাই চেনে ঝাঁকা-নাকা গানে’  

news paper

বাবুল হৃদয়

প্রকাশিত: ১৪-৩-২০২৩ দুপুর ১২:২৭

47Views

নব্বই দশকের আলোচিত সঙ্গীতশিল্পী রুক্সি আহমেদ। নক্ষত্র হয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে এলেন, দেখলেন ও জয় করে নিলেন এবং বেশ কিছুদিন বাদে কেন জানি হারিয়ে যেতে চাইলেন, বর্তমানে কেমন আছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। বলছি রুক্সি আহমেদের গল্প। কেন হারিয়ে যেতে চাইছেন-এত প্রতিভা থাকা সত্বে, সেটি জানার জন্যেই ছুটে গেলাম তার শ্যামলী বাসায়। পেয়েও গেলাম। এবার গল্পটা শুরু করি একেবারে শুরু থেকে। 

বাবা শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং মা রওশন আরা কুমকুমের ঘর আলো করে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে সংগীত তারকা রুক্সি আহমেদের জন্ম হয়।বাবা-মা দুজনেই ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সে সুবাদে শৈশব ও কৈশর কেটেছে রাজশাহী শহরে। রুক্সি আহমেদ মনে করেন রাজশাহীর মাটি বায়ু ও প্রকৃতি শিল্পী সৃষ্টিতে যেন অনেক ভূমিকা রাখে। 

রুক্সি আহমেদের জন্মের ঠিক পাঁচ বছর বাদে জন্ম নেয় একমাত্র আদরের ভাই সিজার। বড় হতে থাকেন সিজার ও রুক্সি। আনুষ্ঠানিক ভাবে মাত্র ৯ বছর বয়সে সঙ্গীতগুরু শেখ আব্দুল আলিমের কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় রুক্সির।‘শিশুমেলা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীতে সংগীতে পথচলা শুরু হয় রুক্সির।  ছোট ভাই সিজারের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় রুক্সি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী হন ১৯৯১ সালে।যে কোনো প্রতিযোগিতার ফর্মটি ছোটভাই সিজারই এনে পূরণ করে দিতেন এবং বোনের মেকআপ ও কস্টিউম সিজার নিজেই ঠিক করে দিতেন। কারণ সিজার ছিলেন একজন “ডিজাইনার”। সঙ্গীতের পাশাপাশি রুক্সি ইংরেজি সাহিত্যে বি,এ অনার্স এবং এম, এ করেন।

হামদ নাত দিয়্ইে তার গান গাওয়া শুরু, ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীতও গাইতেন, ক্লাসিকালও দখলে ছিল তার। সময়ের বিবর্তনে যে মেয়েটি প্রচুর পরিমানে হামদ নাত এবং ইসলামিক গান গাইতে পছন্দ করতেন, সেই মেয়েটি কি না ১৯৯৫ সালে ঝাঁকা-নাকা গানে হিট হয়ে যায়। সাউন্ডটেক ও সংগীতার ব্যানারে তার প্রায় সবগুলো অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। তার গাওয়া ঝড় তোলা গানগুলোর মধ্যে ‘চাঁদ জ্বলে তাঁরা জ্বলে’, ‘কাটেনা দিন তোমাকে ছাড়া’, ‘পদ্মদীঘির পদ্ম আমি’, ‘হীরা চাইনা পান্না চাইনা’ ও ‘বন্ধু চলে যেওনা’ এই গানগুলো উল্লেখযোগ্য।

গানের পাশাপাশি এরই মধ্যে রুক্সি আহমেদ লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান। রুক্সির একক অডিও ১২টি, মিক্সড অ্যালবাম ১০টি, ১০০-এর মতো বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে ভোকাল দিয়েছেন, চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের সংখ্যা ১০০- এর মতো। নিজের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সহ বিদেশের বেশ কয়েকটি দেশের মঞ্চে ঝড় তুলেছেন জনপ্রিয় এই সঙ্গীত শিল্পী। 

বিদেশের যে সকল দেশে সংগীত পরিবেশন ও ভ্রমণ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হল- ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপান, দুবাই, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, কুয়েত ও সৌদি আরব। ‘মা’ রওশন আরা কুমকুম রুক্সির প্রতিটি কাজে ও প্রতিটি প্রোগ্রামে সব সময় হয়েছেন ছায়াসঙ্গী।

খুব ভালো ভাবে খুব সুন্দর ভাবে স্বপ্নের মতো করে কেটে যাচ্ছিলো রুক্সির দিনগুলো। ১৯৯৭ সাল, হটাৎ এক ঝড় উঠে, রোড একসিডেন্টে রুক্সি হারান তার একমাত্র প্রানপ্রিয় ছোট ভাই সিজারকে। পাগল পারা হয়ে ওঠেন। সব জায়গায় খুঁজে বেড়ান তিনি সিজারকে কিন্তু সিজার তো তখন ওপারে। খুব অবাক করা বিষয় কি জানেন ? সিজার ওপারে যেয়েও একমাত্র বোনের হাত ছাড়েননি। প্রায় প্রতিদিনই বোনকে স্বপ্নে বলে যেতেন, শক্ত হয়ে গানের জগতে ফিরতে। এমনকি কোন শাড়ীর সাথে অথবা কোন ড্রেসের সাথে কি ধরনের মেকআপ করতে হবে, কি ধরণের জুয়েলারী পরতে হবে সেটিও কিন্তু সিজার একমাত্র বোনকে স্বপ্নে বলে যেতেন। সিজারের চাওয়ার কারণে রুক্সি আবারো গানে ফিরেন । আবারো বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দেন শ্রোতা দর্শককে। রুক্সি বলেন- মা, ছোটভাই সিজার ও অসংখ্য ভক্ত শ্রোতার অনুপ্রেরণায় আজকের এই সংগীত তারকা রুক্সি।

আবারো রুক্সির জীবনে ঝড় উঠে, ২০১৪ সালে আগস্ট মাসে না ফেরার দেশে চলে যান তাঁর ছায়াসঙ্গী ‘মা’। আবারো ভেঙ্গে পড়েন তিনি। গানে মনোযোগ কমিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর-শিক্ষকতার পেশায় তিনি বেশি মনোনিবেশ করেন।

তিনি বলেন , “আমি ওদের সঠিক ভাবে শিক্ষা দিতে চাই”। বর্তমানে তিনি আইনজীবী স্বামী এবং বাবাকে নিয়ে বসবাস করছেন। গান যে একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। তবে মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন। করোনা শুরুর আগেও তিনি জাপান গিয়েছিলেন ‘শো’ করতে। তার ভক্ত শ্রোতা দর্শকদের ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে তিনি আবারো নতুন বছরে গানে ফিরছেন নতুন করে। নতুন বছরে তিনি দর্শকদের উপহার দিবেন বেশ কিছু হারানো দিনের গান ও ভ্যালেনটাইনডে উপলক্ষে ভালোবাসার গান । ” তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয়” সহ শচীন কর্তার গানও থাকছে তার ভেতর। নতুন রূপে রুক্সি ফিরে আসুক আমাদের মাঝে এমনই শুভ প্রত্যাশা।

 


আরও পড়ুন