ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯-৪-২০২৩ দুপুর ৪:১৩

17Views

ঠিকাদারীর ভুয়া কার্যাদেশ ও বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে ৩০ শতাংশ লভাংশের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পল্টন মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. সোহাগ ইসলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর এলাকায় তাদের বাড়ি। তার বাবার নাম মো. আইনুল ইসলাম।
অভিযোগে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর এলাকায় মো. শামীম ভুইয়াকে প্রতারক সোহাগ ইললাম তার গরুর খামার, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখান। একপর্যায়ে তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন বলে চুক্তিপত্রের কাগজপত্র ছাড়া ঠিকাদারী ব্যবসার ওয়ার্কওয়াডার দেখানো হয়। এতে মো. শামীম ভুইয়া আত্মীয়তার পরিচয় ছাড়াও একই গ্রামের বিশ^স্ত হওয়ায় তিনশ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে এক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে গত ২০১৭ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর উক্ত ব্যবসার বিষয়ে শামীম ভুইয়া খোঁজ খবর নিতে গেলে তাকে জনৈক মোশাররফ হোসেন শামসুদ্দিন এর সাথে ৮ কোটি টাকার রড ও ৩৫ লাখ টাকার সিমেন্টের ব্যবসার চুক্তিপত্র দেখানো হয়। এছাড়া, অপর একটি কার্যাদেশ মেসার্স চান মিয়া বিক্স এর ওয়ার্ক ওয়ার্ডার যার পরিমাণ ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৭ টাকার কাজ হস্তান্তরের চুক্তিনামা দেখানো হয়। আর মামলার বাদী মো. শামীম ভুইয়াকে মেসার্স সালেহা এন্টারপ্রাইজ এর একটি কার্যাদেশ প্রদান করে বলেন, এই কাজগুলো সম্পন্ন হলে তার সঙ্গে ব্যবসার হিসাব নিয়ে বসবেন। আর মামলার বাদীর পাওনা হিসাব লভাংশসহ সব বুঝিয়ে দেবেন। এতে মামলার বাদী আশ^স্ত হন। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও প্রতারক সোহাগ ইসলাম তার পাওনা টাকা দেই, দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এরপর মামলার বাদী তার প্রতি সন্দেহ হলে তিনি সোহাগের দেওয়া সকল কার্যাদেশ ও চুক্তিপত্রের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন যে, সকল কাগজপত্রই ভুয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করা। 
পরে প্রতারক সোহাগের সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল মামলার বাদী মো. শামীম ভুইয়া যোগাযোগ করেন। এর ৩ দিন পর গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে পল্টন থানাধীন ৩০/এ ভিআইপি রোডস্থ নয়া পল্টনের হোটেল ভিক্টরে শামীমকে দেখা করতে বলেন। তার কথামত ওই দিন মামলার বাদী উক্ত হোটেলে সাক্ষীদের নিয়ে উপস্থিত হন। এসময় সোহাগ ইসলামের সঙ্গে ৫/৬ জন সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। তখন তাদের সামনেই সোহাগ ইসলামের কাছে মামলার বাদী তার পাওনা টাকা ও লাভসহ দাবি করেন। এসময় সন্ত্রাসীরা মামলার বাদী মো. শামীম ভুইয়ার উপর হামলার চেষ্টা চালায় এবং তিনি প্রতারক সোহাগের কাছে কোনো টাকা পাবে না বলে জানায়। একপর্যায়ে মামলার বাদী ও তার সাক্ষীদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ ও হুমকি ধমকি দেন। পরে পরিবারসহ তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে এ ঘটনার পর গত ১৭ এপ্রিল পল্টন মডেল থানায় মো. শামীম ভুইয়া বাদী হয়ে প্রতারক সোহাগ ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ৩৫। ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬। উক্ত মামলার পল্টন মডেল থানা পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক সোহাগ ইসলামকে গ্রেফতার করে। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালতে শুনানী শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতারক সোহাগ ইসলাম ৫ থেকে ৭ বছর আগেও টেইলার্সের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। এসময় তার বাবা মো. আইনুল ইসলাম বাস কাউন্টারের চেকারের কাজ করতেন। বর্তমানে স্থানীয় ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ৪টি গরুর খামার, ২টি মুরগির খামার, ৪টি ইটভাটার মালিক এবং ডুপ্লেক্স বাড়ি ছাড়াও বেশ কয়েকটি মাটি কাটার ভেকুর মালিক হয়েছে। এছাড়াও নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। জিরো থেকে হিরো হওয়া প্রতারকের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মামলার সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত প্রতারক তদন্তকারীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য। সে সু-পরিকল্পিতভাবে ব্যবসা সম্পর্কে মামলার বাদীর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের প্রতারক সোহাগ ইসলাম স্বীকারও করেছে। এ ঘটনায় প্রতারকচক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশ তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।


আরও পড়ুন