প্রেমের ফাঁদে পড়া তরুণী দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে

news paper

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯-৫-২০২৩ রাত ১১:৫

54Views

প্রথমে ‘প্রেম’, তারপর বিয়ে। ভালোই চলছিল বন্যার (ছদ্ম নাম) সংসার। কিন্তু সেই সুখ খুব বেশি দিন টেকেনি। প্রতারক স্বামী তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চেতনানাশক খাইয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। যখন জ্ঞান ফেরে, তিনি তখন তাকে অন্ধকার একটি ঘরে বন্দী দেখতে পান। ওই ঘরেই কেটেছে আড়াই মাস। নির্যাতন ও অচেতন করে তাকে যৌনবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পান তিনি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই তরুণ ও বন্যা একই সঙ্গে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। তরুণ তার প্রথম বিয়ের কথা গোপন রাখেন। তবে বন্যার আগের বিয়ের কথা তিনি জানতেন। গত বছরের মে মাসে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তারা বন্যার বাবার বাড়িতে থাকতেন। দেড় মাস পর বন্যা জানতে পারেন, তার স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়।
এক পর্যায়ে ওই তরুণ ক্ষিপ্ত হন এবং প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। প্রথম স্ত্রী তালাক দেওয়ার কথা বলে বন্যার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। এক মাস পর ওই যুবক জানান, প্রথম স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলার নিষ্পত্তির জন্য অনেক টাকা লাগবে। এ জন্য তিনি বন্যাকে নিয়ে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কাজ নেবেন। গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে তারা বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বাসের মধ্যে চেতনানাশক খাইয়ে বন্যাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বিক্রি করে পালিয়ে যান তিনি। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন বন্যা। নিখোঁজের এক মাস ১২ দিন পর আদালতে মামলা করেন তার মা। নিখোঁজের আড়াই মাস পর বন্যা পালিয়ে বাড়িতে যান। তাকে গত ১ ফেব্রুয়ারি তার বাড়ি থেকে উদ্ধার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়। আর তার ফিরে আসার খবর পেয়ে ওই তরুণ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই তরুণ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।
যেভাবে যৌনবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়: তদন্ত শুরুর পর পিবিআই ভুক্তভোগীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে। জবানবন্দিতে বন্যা জানান, ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাস যানজটে থেমে যায়। তখন তার স্বামী পানি ও বমির ট্যাবলেট আনার কথা বলে বাস থেকে নেমে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বমির ট্যাবলেট বলে একটি ট্যাবলেট খেতে বলেন। ট্যাবলেট খেয়ে তিনি (বন্যা) ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পর তিনি ছোট্ট একটি অন্ধকার ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করেন। কিছুক্ষণ পর এক নারী তার কক্ষে এসে জানান, তিনি (বন্যা) দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আছেন। তরুণীর ভাষ্য, তিনি যে ঘরে বন্দী ছিলেন, সেই ঘরের বাইরে ১১১ নম্বর লেখা ছিল। পরদিন সেখানকার ‘সরদার’ এসে তাকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি রাজি হননি। এতে ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। আড়াই মাস পর গত ১৫ নভেম্বর পাঁচ নারীর সঙ্গে যৌনপল্লীর বাইরে একটি পার্লারে যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। সেখানে দুজন প্রবেশ করার পর তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। পার্লারের খরচ হিসেবে তাকে ২৫০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই টাকায় বাসে ভাড়া দিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। লোকলজ্জায় বিষয়টি বন্যা তখন বিষয়টি চেপে যান।
তদন্ত কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সরদার বাবর আলী বলেন, ভুক্তভোগী বন্যাকে যৌনপল্লীতে বিক্রিকারী পলাতক। যাদের কাছে তাকে বিক্রি করা হয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা যায়নি। ভুক্তভোগী কোথায় ছিলেন, কাদের কাছে ছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি। এ কারণে ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন