হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো অপহরণকারিরাঃ র‍্যাব

news paper

শাহেদ ফেরদৌস হিরু, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২৫-৫-২০২৩ বিকাল ৬:২০

5Views

কক্সবাজারের টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণ হওয়ার ২৫ দিন পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। র‍্যাব জানায়, মুক্তিপণ না পেয়ে রুবেলসহ তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। পরে লাশ পুড়িয়ে দিয়ে আলামত নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছে। এ কারণে উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো অর্ধগলিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুরে র‍্যাব-১৫ এর এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৫ অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন এসব কথা জানান।তিনি জানান, ডাকাত সোনালীর দেয়া তথ্যে বুধবার রাতেই এমরুল কবির (৩০) ওরফে ফইরা নামে আরও একজনকে আটক করেছে র‍্যাব।

আটক সৈয়দ হোসেন ওরফে সোনালী ডাকাত মোছনী ক্যাম্পের ব্লক-ই এর বাসিন্দা আবু সামাদের ছেলে এবং আর এমরুল করিম ওরফে ফইরা (৩০) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিলের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। র‍্যাবের দাবি আটককৃতদের মধ্যে সোনালী ডাকাত এ তিনজনকে অপহরণের মূল হোতা।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, পাত্রী দেখার লোভ দেখিয়ে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল (৩৫) ও তার দুই বন্ধু ইমরান ও ইউসুফকে টেকনাফ নেন সোনালী ডাকাত। পরদিন রুবেলের মোবাইল থেকে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। পরিবারকে ভয় দেখাতে নিযার্তনের একটি ভিডিও তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়। ঘটনাটি জানানোর পর র‍্যাব অপহৃতদের উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।

তিনি জানান, র‍্যাব নির্যাতনের ফুটেজে অপহরণকারী চক্রের একজনকে সনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালায়। সর্বশেষ গত ২৪ মে টেকনাফ হাবিরছড়া দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের মূলহোতা সোনালী ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তার অন্যান্য সহযোগীরা কৌশলে পালিয়ে যায়। আটকের পর সোনালী র‍্যাবকে জানায়, অপহৃতদের গুলি করে হত্যা করার পর পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দেয়া হয়। পরে লাশগুলো আগুনে পুড়ে আলামত ধ্বংস করারও চেষ্টা করা হয়।

পরে আটক সোনালীকে সঙ্গে নিয়ে র‍্যাবের একাধিক দল দীর্ঘ ৫ ঘন্টা দূর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে অপহরণকারী চক্রের আস্তানায় পৌঁছে। আস্তনার পাশে একটি স্থানে দুইটি গলিত লাশ ও উক্ত স্থান হতে কিছুটা দূরে আরো একজনের গলিত লাশ পাওয়া যায়।

গলিত লাশগুলো অপহৃত রুবেল, ইমরান এবং ইউসুফের বলে জানিয়েছেন আটক সোনালী। সোনালী আরও জানায়, বিভিন্ন সময় অপহৃতদের ধরে এই আস্তানায় নির্যাতন চালানো হতো। এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের পরিবারে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতো। আর দাবীকৃত টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ী এলাকায় ফেলে দিত। রাতেই আটক করা হয় ফইরাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিসিআর-এ গ্রেফতার দুজনের নামে কোন মামলা কিংবা অপরাধের রেকর্ড নেই। তবে, তারা-ই অপহরণসহ নানা অপরাধ কান্ডের সাথে যুক্ত বলে জানতে পেরেছি আমরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক বলেন, পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণ হয়েছে নাকি মাদক বা অন্যকোন বিষয় এখানে লুকায়িত তা তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে।  শতভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন দাবি করে তিনি আরো বলেন, মাদক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সকল শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি আমরা অপরাধীকে শনাক্ত করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন শুধু মাদক বাহকদের পাচ্ছি। মামলা না থাকায় গডফাদদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে মাদকের যে তালিকা রয়েছে তা ধরেই নাম আসা গডফাদারদের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। 


আরও পড়ুন