কেন ইমরানের দল ছাড়ছেন নেতা-কর্মীরা

news paper

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭-৫-২০২৩ বিকাল ৫:৫৭

4Views

পাকিস্তানে গত ৯ মে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এই অভিযান থেকে বাঁচতে গত কয়েক দিনে ‘ঝাঁকে ঝাঁকে’ দল ছাড়ছেন পিটিআইয়ের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এই দলত্যাগীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও।

শনিবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ দলত্যাগী এই নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পাকিস্তানের চার প্রদেশ পাঞ্জাব, সিন্ধ, খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান— পিটিআইয়ের প্রতিটি প্রাদেশিক শাখা থেকেই নেতা-কর্মীদের দলত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ এবং পিটিআইয়ের মূল ঘাঁটি পাঞ্জাবে দলত্যাগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জিও নিউজের তালিকা জানাচ্ছে, গত ১৮ দিনে পিটিআই পাঞ্জাব প্রদেশ শাখা থেকে পদত্যাগ করেছেন ৫৫ জন নেতা। এই নেতাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফাওয়াদ চৌধুরি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শিরীন মাজহারি, সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ ওমরের মতো শীর্ষ নেতারা যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সাধারণ পরিষদ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) উচ্চকক্ষ সিনেট এবং প্রাদেশিক আইনসভার বেশ কয়েকজন সাবেক সদস্যও।

এছাড়া সিন্ধ প্রদেশে ১৬ জন, খাইবার পাখতুনখোয়ায় ১০ জন এবং বেলুচিস্তানে ২ জন পিটিআই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই দলত্যাগীদের প্রায় সবাই সাধারণ পরিষদ ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য।

সাম্প্রতিক এক ভিডিওবার্তায় ইমরান খান অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার পিটিআই নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য করছে। তবে বেশ কয়েকজন দলত্যাগী নেতা-কর্মী জানিয়েছেন—তারা নিজের ইচ্ছেতেই দল ছেড়েছেন।

সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ গঠন করেন ১৯৯৫ সালে। দীর্ঘ ২৩ বছর মাঠের রাজনীতির পর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয় পিটিআই। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। তবে এতে সামরিক বাহিনীর আশীর্বাদ ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে অবশ্য সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় ইমরান খানের। এই সুযোগে পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতারা ইমরানের বিপক্ষে একাট্টা হওয়া শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের এপ্রিলে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান।

কিন্তু নিজের এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের পক্ষে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র এই অধিনায়ক। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে তার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করে পিটিআই। একই সময়ে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাকিস্তানজুড়ে শতাধিক মামলা হয় ইমরান খানের বিরুদ্ধে।

গত ৯ মে আলোচিত আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হন ইমরান খান। এই ঘটনার জেরে তার দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং সেই বিক্ষোভে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন সেনানিবাস ও সেনাদপ্তরে হামলা হয়।

তিনদিন ধরে চলে সেই বিক্ষোভ এবং এই ৩ দিনে পাকিস্তানে পুলিশ-নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পিটিআই কর্মী-সমর্থকদের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন।

ইমরান খান অবশ্য জামিনে আছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কোনো মামলাতেই ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

কিন্তু সামরিক স্থাপনায় হামলার ব্যাপারটি একদমই সহজভাবে নেয়নি পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করা সেনাবাহিনী। গত ১২ মে থেকে বিক্ষোভ-নাশকতায় যুক্তদের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সামরিক বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে— গ্রেপ্তারকৃতদের সবার বিচার হবে সামরিক আদালতে।

মূলত সামরিক বাহিনীর এই ঘোষণা ও পুলিশি অভিযান শুরুর পর থেকেই পিটিআই নেতা-কর্মীদের দলত্যাগের হিড়িক শুরু হয়।


আরও পড়ুন