স্বপ্ন সুপারশপের কর্মীকে ডেকে নিয়ে কর্মকর্তার নির্যাতন
প্রকাশিত: ১৪-৬-২০২৩ দুপুর ৩:৪৫
ঢাকায় স্বপ্ন সুপারশপের প্রধান কার্যালয়ে রংপুর থেকে এক কর্মীকে ডেকে এনে অমানুষিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর যুগ্ম সম্পাদক পরিচয়ে প্রতিবেদককে হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন স্বপ্নের এক কর্মকর্তা।
অভিযোগে জানা গেছে, ‘স্বপ্ন সুপারশপের’ রংপুর ডিভিশনের ফ্রাঞ্চাইজি এক্সপেনশন-এর আইডি নং ১৯৩০৭ মো. রবিউল ইসলামকে গত ৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মানবসম্পদ বিভাগের (এইচআর) প্রধান মো. খুরশীদ আলম পরিচয়ে ফোন করেন। এরপর রবিউল ইসলামকে তিনি ৮ জুন স্বপ্ন সুপারশপের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। ফোনের কথা রবিউল ইসলামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফ্রাঞ্চাইজি এক্সপেনশন মো. সামছুজ্জামনকে বলতে নিষেধ করা হয়। ওই কর্মকর্তার কথা মত রবিউল ইসলাম তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে না জানিয়ে গত ৮ জুন বিকাল ৪টার দিকে মো. খুরশীদ আলমের অফিসে উপস্থিত হন। এরপর মো. খুরশীদ আলম তার কক্ষে মো. রবিউল ইসলামকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি রবিউল ইসলামকে কিছু মিথ্যা অপকর্মের কথা স্বীকার করতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু রবিউল ইসলাম কোনো প্রকার অন্যায় না করায় তিনি তার কথামতো স্বীকারোক্তি দেননি। স্বীকারোক্তি দিতে রাজী না হওয়ায় মো. খুরশীদ আলম একটি লাঠি দিয়ে তাকে অমানুষিক মারধর ও নির্যাতন করেছেন বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন।
নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রবিউল ইসলাম তাকে বলেন, ‘স্যার আমি কোন অপরাধ করি নাই, তাই আমি স্বীকারোক্তি কেমনে দেব? আর আমি কখনই কোনো ভেন্ডরের সঙ্গে কোনো কিছু করি নাই।’ একপর্যায়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামসুজ্জামান কী কী দুর্নীতি করেছেন, তা বলার জন্য তার স্বীকারোক্তি চাওয়া হয়। কিন্তু রবিউল ইসলাম যা করেননি তা স্বীকার করতে পারবে না বলে তাকে জানিয়ে দেন। এতে মো. খুরশীদ আলম আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আবার তাকে প্রায় এক ঘন্টা মারপিট করা হয়। পরে রবিউল ইসলামকে খুরশীদ আলম রবিউলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. সামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তখন রবিউল ইসলাম তাকে বলেন, ‘আমার জানামতে মো. সামসুজ্জামান স্যার কোন প্রকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। এ জন্য আমি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের স্বাক্ষী দিতে পারবো না।’ এ কথা রবিউল ইসলাম বলার পর পরই এইচ আর মো. খুরশীদ আলম আবারও তাকে কিল ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন।
এরপর তাকে বলা হয়, ‘সামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিলে তোকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ তখনও রবিউল ইসলাম সামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে অস্বীকার করেন। এ সময় তাকে বলা হয়, ‘তোর বউ তো সুন্দরী। তাকে আমার কাছে দিলে তোকে ছেড়ে দেয়া হবে।’ এরপর এ অভিযোগের বিষয়ে গত ১০ জুন এসিআই লজিস্টিক লিমিটেড এর নির্বাহী পরিচালক এর কাছে রবিউল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পঞ্চল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন রবিউল ইসলাম।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে স্বপ্ন সুপার শপের এইচআর হেড মো. খুরশীদ আলম এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার সেল ফোনে কল করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর স্বপ্ন সুপারশপের হটলাইন নম্বরে উল্লেখিত বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে একজন কর্মকর্তার ফোন নম্বর দেয়া হয়। এরপর তাকে কল করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। প্রতিবেদক তার পরিচয়ে দেওয়ার পর উক্ত কর্মকর্তা নিজেকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন(ক্র্যাব) এর যুগ্ম সম্পাদক পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ক্র্যাবের যুগ্ম সম্পাদক রুদ্র মিজান। আপনি ভুয়া।’ এই বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত ব্যক্তি স্বপ্ন সুপারশপের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। পরে এ বিষয়ে ক্র্যাবের নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় দুই পক্ষই আপস করার কথা বলে থানায় আসার কথা। তাদের এক পক্ষ বলছেন, তারা ১৫ লাখ টাকা পাবেন। আরেক পক্ষ বলছেন, তাকে রংপুর থেকে ডেকে এনে মারধর করা হয়েছে। তবে মারধরে কোনো রক্তপাত হয়নি। ফুলা জখম হয়েছে। তারপরও যদি আপস মীমাংসা না হন, তা হলে দুই পক্ষেরই মামলা নেওয়া হবে।’