পেশকার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওবায়দুল হক বিএসসি কে প্রাক্তন ছাত্র- ছাত্রী পরিষদ'র বিদায়ী সংবর্ধনা

news paper

আমির হোসেন

প্রকাশিত: ৩-৭-২০২৩ দুপুর ১:১১

330Views

বিদায় মানে বেদনার। তবুও বেদনার দিনকেও স্মৃতিময় করতে নানান আয়োজন চলে  বর্তমান এ সমাজে। তেমনই  এক ব্যতিক্রম আয়োজন পেশকার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ প্রথম
সকলের প্রিয় শিক্ষক ওবায়দুল হক বিএসসি কে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা  জানিয়েছেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ৩০ জুন( শুক্রবার) বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এ প্রিয়   শিক্ষকের  স্মৃতিচারণ বক্তব্য, ছন্দ, কবিতা আবৃত্তি,ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেষ্ট উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে বিদায় জানাতে দেখা যায়।
 
পেশকার হাট উচ্চ বিদ্যালয় সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ওবায়দুল হক বিএসির অবসর জনিত বিদায় অনুষ্ঠানে  শেষের দিকে  অনুষ্ঠানস্থলে ভারী বর্ষণে সামিয়ানা ছিল  শব্দমুখরে। তবুও   প্রাক্তন ছাত্র -ছাত্রী ও অতিথিরা  ছিল প্রানবন্ত।  
 
প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী  পরিষদ ও  নির্ঝর গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরনবী চৌধুরী  সেলিমের সভাপতিত্বে ও  প্রাক্তন ছাত্র -ছাত্রী  পরিষদ'র  সংগঠক শেখ আবদুল্লাহ্ সৌরভ এবং  ফারিহা মাহি'র যৌথ নান্দনিক সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন 
পেঃউঃবি প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদ সাধারণ সম্পাদক  জাফর ইকবাল সবুজ,
বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অন্যান্যদের মাঝে  বক্তব্য রাখেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ( যুগ্মসচিব) এবিএম শওকত ইকবাল শাহীন,সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের  সহযোগী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী অধ্যাপক কামরু ইসলাম আদিব,চরকাঁকড়া ইউপি  চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ,  পেঃউঃবি প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন,  পেঃউঃবি সাবেক ছাত্র (১৯৮৫ ব্যাচ) আ ক ম মহসীন,
পেঃউঃবিঃ সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৮৮ ব্যাচ)তপন চন্দ্র ভৌমিক, পেঃউঃবি সাবেক শিক্ষিকা মোস্তারি বেগম, সংবর্ধিত ওবায়দুল হক বিএসসির সহধর্মিণী তাহেরা আক্তার , পেঃউঃবিঃ সাবেক ছাত্র আবদুর রহিম (১৯৯১ ব্যাচ), মনোয়ার আহছান ফারুকী পাপ্পু (১৯৯৪ ব্যাচ), সালাউদ্দিন হিরো(১৯৯৫ ব্যাচ),আবুল কাশেম মোহন (১৯৯৫ ব্যাচ),
আবদুল খালেক বাবু(১৯৯৭ ব্যাচ),ফারুক আজম মাসুদ(১৯৯৮ ব্যাচ),দিদারুল ইসলাম (১৯৯৯ ব্যাচ) দেলোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীর ( ২০০০ ব্যাচ) সাকায়েত হোসেন (২০০০ ব্যাচ), খাদেমুল বাসার সায়েম(২০০১ব্যাচ) এ এফ এম আবদুল আজিজ ফয়েজ(২০০১ব্যাচ),আতিকুর রহমান রুবেল(২০০৪ ব্যাচ), পেশকারহাট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র -ছাত্রী পরিষদ সাংগঠনিক সম্পাদক (২০০৬ ব্যাচ ) নূরের রহমান আসিফ,শওকত ইকবাল মেহেরাজ(২০০৭ ব্যাচ), ইমাম উদ্দিন (২০০০ ব্যাচ)সহ অন্যান্য  নেতৃবৃন্দ।  
 
ওবায়দুল হক বিএসসি অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জীবনের ৪০টি বছর  কাটিয়ে ছিলেন। তিনি সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হলেও  সততা,নিষ্ঠাও মানবিকতার ক্ষেত্রে কখনো আন্তরিকতার কমতি ছিল না। 
প্রিয় শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা    স্মৃতিচারণ করে বক্তব্যে অনেকেই  আবেগাআপ্লুতা হয়ে পড়েন, আবার অনেকই  তাদের  স্কুল জীবনের আলো - আঁধারের সময় গুলি  তুলে ধরেন। সকল বক্তার  - বক্তব্যে রয়েছে ওবায়দুল হক বিএসসি'র ইতিবাচক কর্মের গুণাবলির দিক। অনুষ্ঠানের সকল বক্তা তাঁর ভুয়সি প্রশংসা এবং দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবন কামনা করেন। 
 
সংবর্ধনার মাঝা মাঝি সময়ে   তাদের  এ প্রিয় শিক্ষককে  বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা সম্মাননা স্মারক ও বিভিন্ন  উপহার তুলে দেন। 
 
অবসরপ্রাপ্ত বিদায়ী  সংবর্ধিত শিক্ষক ওবায়দুল হক বি এসসি  আয়োজক বৃন্দ ও  প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্যে বলেন,আকাশে  চন্দ্র সূর্য না থাকলেও  একঝাঁক  তারা  থাকলে কিন্তু  তখন  আলোর প্রয়োজন হয় না। এই বিদ্যালয়ে এত গুলো  উজ্জ্বল নক্ষত্র থাকলে  এলাকায়  অন্ধকার দূরীভূত হবে। তবে তাদেরকে আমরা আলোর বিকিরণের সময় সুযোগ ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। 
আজ আমি অত্যান্ত আবেগাপ্লুত আমার প্রাক্তন ছাত্ররা যে গুনগান গেয়েছেন তা ততটুকু দিতে পারেনি । আমি বিবেকের কাছে বাঁধা। এখনো আমার প্রাণ কাঁদে। না জানি, কত ছাত্র অর্থের অভাবে লেখা পড়া করতে না পারে। 
অনেক ছাত্রের আর্থিক দৈন্যতা কারণে উপযুক্ত  পড়ার পরিবেশ দিতে পারিনি যদি তা হয়ে থাকে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়ে নিচ্ছি। আমার 
এ দীর্ঘ কর্মজীবনে বিদ্যালয়ে ইতিবাচক দিকগুলোকে স্বাগত জানিয়েছি। আমি সব সময়ই ইতিবাচক দিকগুলিকে  গুরুত্ব দিয়েছিলাম।এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে  আমি ছিলাম! জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে এ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ৪৫ বছর  কাটিয়েছি  তন্মধ্যে শিক্ষাগত জীবন ৪০ বছর,  ছাত্র জীবন ৫ বছর। এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি ধুলোকণার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি এ বিদ্যালয়কে নিজের সম্পদ ও  নিজের শরীরের মত মনে করেছিলাম ।  জানিনা আমি কতটুকু দিতে পেরেছি। যদি এ দেওয়াতে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। 
 
আমি সব সময় প্রতিষ্ঠানের  ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে   কঠিন ছিলাম।   কারো সাথে আপস করিনি।আমি যা বুঝি  কারো মেধা কম থাকতে পারে, কারো মেধা বেশি থাকতে পারে, কেউ অত্যান্ত মেধাবী, কেউ কম মেধাবী হয়।লেখা পড়ায় কেউ কম, কেউ বেশি, সেটি বড় কথা নয়। তবে, আমি বিশ্বাস করি ইচ্ছে করলে  মানুষ সৎ হতে পারে,  ইচ্ছে করলে মানুষ  সৎ চরিত্রবান  হতে পারে।আজকের সমাজে শিক্ষিত এবং সুশিক্ষিতদের মধ্যে তফাৎ রয়েছে অনেক । 
এক প্রক্তন ছাত্রের বক্তব্যের সূত্রধরে তিনি  আরো বলেন,আমাকে শিক্ষিত একটি মা' দাও সেটি নয়, আমাকে একটি সৎ মা' দাও, আমাকে একটি জ্ঞানী মা' দাও,আমি একটি জাতি উপহারদেব। এটি হলো  আমার দৃষ্টিতে বাস্তবতা। 
 
অপরদিকে তিনি  পেশকার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের  প্রাক্তন ছাত্র- ছাত্রী  পরিষদের কার্যক্রম যে দুর্বার গতিতে চলছে তার জন্য  সন্তোষ প্রকাশ করে সংগঠনটি   যেন লক্ষ্য,  উদ্দেশ্যে পৌঁছতে পারে  এর  উত্তরোত্তর সাফল্য  কামনা করেন।

আরও পড়ুন