ইস্পাত করপোরেশন

জালিয়াতির মাধ্যমে তিন কর্মকর্তার চাকরি

news paper

আব্দুল লতিফ রানা

প্রকাশিত: ১০-৭-২০২৩ দুপুর ৪:৪৫

131Views

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএসইসি এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একজন মন্ত্রীর পিএস যুগ্ন সচিব মো. আব্দুল ওয়াহেদ এর নেতৃত্বে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতি অনিয়ম ও সরকারি সম্পদ গায়েবকারীসহ ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদে চাকুরী নেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য সকালের সময় এর কাছে রয়েছে। আর এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এসব বিষয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি সকালের সময়কে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ইস্পাত করপোরেশন দেখেন আর সচিব দেখন। তার পরও আপনি বলেছেন, ‘আমি খবর নেবো’ বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের অন্যতম যুগ্ম সচিব ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্যবসায়িক সহযোগি আরাফাত ও ইষ্টার্ন কেবলস লিমিটেড এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজদ এবং ইষ্টার্ণ কেবলস লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার এস এম সালাউদ্দিন রয়েছেন। তাছাড়া, দুর্নীতির সিন্ডিকেট পিএস আব্দুল ওয়াহেদ এর নির্দেশনায় ‘ইর্ষ্টার্ন কেবলস’ দুর্নীতির জগতে পরিণত করা হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

অপরদিকে ঢাকা ষ্টীল ওয়ার্কস লিমিটেড ও বর্তমান রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২০২০সালের ১সেপ্টেম্বর বিভাগীয় মামলা রজু করা হয়েছে।উক্ত বিভাগীয় মামলার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। যার স্বারক নং ৩৬.৯৩.০০০০.০১৭.২৭.০০(২).১৮.৪৯৮.(ক)। ওই প্রতিবেদনে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ঢাকা ষ্টীল ওয়ার্কস লিমিটেড ও বর্তমান রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার বিষয়ে মো. মনিরুল ইসলাম, যুগ্মসচিব এবং পরিচালক (বাণিজ্যিক) এর নেতৃত্বে এক সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

সুত্র জানায়,বিএসইসি’র অফিস আদেশ নং ৩৬.৯৩.০০০০.--- ৮৬৫ মতে গত ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এর মাধ্য মে উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), ইষ্টার্ন কেমন লিমিটেড,সা,এম, জিয়াউল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড এবং মো. মনিরুজ্জামান খান, উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক, রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প ভুঁয়া অভিজ্ঞতা দেখিয়ে নিয়োগ প্রাপ্তি হয়েছেন। আর উৎকোচের মাধ্যমে পদোন্নতিসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে আনীত অভিযোগে উত্থাপিত হওয়ায় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। উক্ত কমিটি বিষয়টি সুষ্টুভাবে তদন্ত পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আর ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি দৈনিক সকালের সময় এর কাছে রয়েছে। 

আরেক সূত্র জানায়, মন্ত্রীর পিএস এর নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটটি অত্যন্ত সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানে ২১০৫ কেজি কপার টেপ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে ধুলো দিয়ে গুদামে তোলার আগেই গায়েব করা হয়েছে। তার আমদানি মূল্য ৪২ লাখ টকার উপরে বলে জানা গেছে। আর গায়েবকৃত কপার টেপ এর বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি টাকা হবে। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়। পরে কর্তৃপক্ষ পরিচালক (বাণিজ্যিক) বিএসইজি কে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আবার ইষ্টার্ন কেবলস ২০০ টন কপার রড ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে, যেখানে শিল্প মন্ত্রীর পিএস ও তার ব্যবসায়কি ঘনিষ্ট বন্ধু আরাফাত এর প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় স্বর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। তাছাড়া, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দারদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়।এরপর তাকে কাজ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের উপর জোর তদবির চালায়। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ দারপত্র বাতিল করতে বাধ্য হন। এ ব্যপারে ১ম স্বর্ননিম্ন দারদাতা কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামালের অভাবে নিশ্চিত কার্যাদেশ বিপরীতে মালামাল সরবরাহ করতে পারছে না। 

অপরদিকে ইষ্টার্ন কেবলস এর বিশাল ফাঁকা জায়গা প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যে প্রতিষ্ঠানের সিবিএ ভাড়া নিয়ে সবজি চাষ করতেন। আবুল কালাম আজাদ, ইষ্টার্ন কেবল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার পর সিবিএ কে বাদ দিয়ে কোন চুক্তি ব্যাতিত বাইরের লোকদের ভাড়া দেন। কিন্তু উক্ত ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানটি কোন ভাড়া পরিশোধ করেননি বলে জানা গেছে।

তাছাড়া, ইষ্টার্ন কেবলস লিমিটেড, এর উপ-মহাব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবির, ন্যাশনাল টিউবস এর (ভারপ্রাপ্ত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সা, এম, জিয়াউল হক ও উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প ভুয়া অভিজ্ঞা দেখিয়ে নিয়োগ প্রাপ্তি,উৎকোচের মাধ্যমে পদোন্নতিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে আনীত অভিযোগের পরিপেক্ষিতে বিএসইসি কর্তৃক উল্লেখিত স্বারক এর মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর উক্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, এ এম রিজওয়ান হোসেন, হিসাব নিয়ন্ত্রক (চ.দ.) বিএসইজি ও এস এম মুসলিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপক (সমন্বয় ও আইন), বিএসইসি। 

উক্ত গঠিত তদন্ত কমিটি উপ -মহাব্যবস্থাপক, মো. হুমায়ূন কবির, উপ-মহাব্যবস্থাপক স, ম, জিয়াউল হক ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান খান এর বিরুদ্ধে ভুঁয়া অভিজ্ঞতার সনদ দেখিয়ে নিয়োগ প্রাপ্তির অভিযোগের বিষয়টি কমিটির নিকট প্রমাণীত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে, মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা ষ্টীল ওয়ার্কস লি. এর দায়িত্বে থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানটির অধীন কোয়ালিটি আয়রন এন্ড ষ্টীল কোং লি. এর জমি গত ২০১৯ সালের ৪ মার্চ ইনটেল ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. এর স্বত্ত্বাধীকারী মো. মইনুল আলম (ভাড়া গ্রহীতা) এর সাথে ভাড়া চুক্তি সম্পাদক করেন। চুক্তিপত্রের শর্তানুয়ায়ী ভাড়াটিয়া খেলাপী হওয়া স্বত্ত্বেও মো. মনিরুজ্জামান খান চুক্তি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এছাড়া দ্বিতীয় পক্ষ ভাড়াটিয়া চুক্তি মোতাবেক গত ২০১৯ সালের ১এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত কোন ভাড়া প্রদান করেননি। ফলে জামানতের টাকা সমন্বয় করলে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত অনাদায়ী রয়েছে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। আবার ভাড়াটিয়ার সাথে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ভাড়া আদায় করা হয়নি এবং ভাড়া আদায়ের জন্য কোন পদর্ক্ষেপ গ্রহণ করেননি তিনি। তাছাড়া  তিনি কর্তব্য কাজে ইচ্ছাকৃত অবহেলা, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করা, ব্যক্তিগত লাভবান হওয়া এবং সরকারের দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণিত হয়েছে। 

আর অভিযোগের বিষয়টির মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করেছেন। আর তদন্ত কমিটির নথি পর্যালোচনা বিএসইসি কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি চেয়ে গত ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর ১০ ডিসেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলেও তিনি তার জবাব দেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় তাকে গত ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুনরায় অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হয়। এরপর একই বছরের ২৫ মার্চ, ১১ জুন সহ পর পর তিনটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি তার জবাব দেননি। পরবর্তীতে অনুমতি নিয়ে গত ২০২০ সালের ২৮ জুন  একটি জবাব দেন। ফলে ৩য় বিষয়টি তিনি বিএসইসি চাকুরী প্রবিধানমালা ১৯৮৯ এর ৩৮ এর (ক) (খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী তিনি দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 
তাদের দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে শিল্পমন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত ইস্পাত করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামানের সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের সময়কে বলেন, আমি  বাহিরে আছি, ‘অন দা ওয়ে’ পরে কথা বলবেন বলে জানান। এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।


আরও পড়ুন