দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মনোনয়ন পাচ্ছে না আ,লীগে বিতর্কিতরা
প্রকাশিত: ২৩-১০-২০২৩ বিকাল ৬:১০
সবকিছু ঠিক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আগামী বছর জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাজি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট পাচ্ছেন কারা এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কিছু মন্ত্রী, এমপির মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেননা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে যেসকল এমপি, মন্ত্রীরা দলের নেতারা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে দলকে বিপদে ফেলছেন তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হব না। এজন্য তারা বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের প্রধান শেখ হাসিনার সেই বার্তা ব্যস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এমাসে প্রায় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন নিশ্চিত করে নির্বাচনি মাঠে থাকার নিদের্শনা দেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া চলতি মাসে শেষ দিকে আরও অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করে করবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এমনটাই জানিয়েছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা জানান, দলের মধ্যে যারা বিতর্কিত এমপি, মন্ত্রী তাদেরকে বাদ দিয়ে সেই আসনে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে মনোনয়নের বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়নের বার্তার অপেক্ষায় বহু এমপি ও মন্ত্রী টেনশনে দিন কাটাচ্ছেন। বিতর্কিত এমপিদের রাখা হয়েছে লাল তালিকায়। এছাড়া এসব আসনে অর্থ্যাৎ বিতর্কিত এমপিদের স্থানে রাখা হয়েছে একাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে বিভিন্ন জড়িপ রির্পোট দেখে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এজন্য দলীয় সাংগঠনিক রির্পোট ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন দলীয় প্রধান বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা আরও জানান, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে দল। অথচ এই অনুকূল সময়কে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করতে পারেননি অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা, তাদেরকেও মনোনয়ন দেওয়া হবেন। এছাড়া সরকার দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি করলেও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যারা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপিকে আর ছাড় দেবে না। এজন্য দুই ফরম্যাটে তৈরি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে না এলে কী করণীয়, আর না এলে কী করণীয়, এসব ভেবে আওয়ামী লীগ দুই কৌশলে নির্বাচনের প্রস্তুত নিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের বাদের তালিকা দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে বাদ পড়ার সারি লম্বা নাও হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করে জরিপ কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক তথ্য সংগ্রহকারী বলেছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে বিতর্কিত কিংবা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পুরনো নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত বলয় তৈরির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছেন-দেশজুড়েই এমন অভিযোগ পেয়েছেন জরিপ কাজে অংশ নেওয়া টিমগুলোর সদস্যরা।
বর্তমানে কোনো কোনো এমপির অত্যাচারে ঘরছাড়া হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এসব তথ্যযুক্ত প্রতিবেদন জরিপকারীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন, তা নিশ্চিত করতে ৩০০ আসনেই বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়। সরকারের বিশেষ কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চালানো হয়েছে জরিপ কার্যক্রম।
আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাদের দিয়ে হতে পারে, পৃথকভাবে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের তালিকাও তৈরি করছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে এলে একরকম আবার না এলে আরেক ধরনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। তবে পৃথকভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়দের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। তার মতে, প্রার্থী তালিকার ব্যাপারে চূড়ান্ত মতামত দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মামলা-হামলা, নিজ নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে রাখা, হাইকমান্ডের সতর্কতা উপেক্ষা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, মাদক কারবারিদের প্রশ্রয়, নারী কেলেঙ্কারিসহ এমপিদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জলমহাল, সরকারি খাসপুকুর, বাড়িঘর দখল, টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
কিছু এমপি আছেন যাদের আমলনামায় নেতিবাচক তথ্যের সম্ভার এতটাই বেশি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আগামী দিনে তারা দলীয় পদপদবিও হারাতে পারেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রতিটা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের থেকে রির্পোট চেয়েছেন। নিদের্শনা মতো প্রতিটা বিভাগের জেলার পর্যায়ে আসন ভিত্তিক রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। অনেক রানিং এমপি, মন্ত্রী, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশেষ করে বিতর্কিত এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সাংগঠনিক রিপোর্ট পরিবর্তন করার সুপারিশ করলেও সাংগঠনিক সম্পাদকরা তা করেনি। প্রতিটি আসনের এমপি,মন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীর কর্মেরফল তুলে ধরা হয়েছে সাংগঠনিক রির্পোটে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রতিটা আসনের বর্তমান অবস্থা দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিকদের কাছে মৌখিকভাবেও শুনেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তিদেরকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা দলের নীতি আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ড করে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের উয়ন্নয়ন অগ্রগতি দেশের মানুষ খুশি। তাই মানুষ যাকে চায় এবং জনপ্রিয়তা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
এ বিষয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, দলীয় মনোনয়ন দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিসা। এলাকায় জনপ্রিয়তা দেখে যাচাই-বাচাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।