সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে নবীন-প্রবীনের লড়াইয়ের সম্ভাবনা
প্রকাশিত: ৪-১-২০২৪ দুপুর ৪:১৯
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে টানা ৪র্থবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। এছাড়াও জনপ্রতিনিধি হিসাবে ৫০ বছর যাবত জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছেন। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গাজীপুরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, বায়োজৈষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য আওয়ামী লীগ নেতা।
এ আসনে আ ক ম মোজাম্মেল হক ছাড়াও আরো আরো ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও কালিয়াকৈর আওয়ামী লীগ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল (ট্রাক), তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপি নেতা তানভীর সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী (প্রতীক সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত ফজলুর রহমান (মিনার), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী আর্শেদুজ্জামান (নোঙ্গর), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মো: সফিকুল ইসলাম (ফুলের মালা)।
স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুর-১ আসনে আ ক ম মোজাম্মেল হক ও রেজাউল করিম রাসেলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধীতা হবে। আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারই প্রথম নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে গাজীপুরে কখনোই কোন আসনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়নি। কিন্তু এবার গাজীপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ এ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার বিপক্ষে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীকে নিয়ে দলীয় একটি শক্তিশালী জোট গঠন করে জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে দিনরাত অবিরাম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। একই সাথে এই তিনটি আসনের নৌকা মনোনীত প্রার্থী, বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন সাবেক এই মেয়র।
সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম যে চমক দেখিয়েছেন তাও এখন মানুষের আলোচনায়। তবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলছেন আমার কার্যক্রম দল নয় ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার অভিবাবক দলের ভালোর জন্যই যা কিছু করার আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
গাজীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রেজাউল করিম রাসেল। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান হন। কিন্তু ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়। পরে ২০২০ সালে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ টি ওয়ার্ডসহ কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম নিজের সর্বশক্তি নিয়ে রাসেলের পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোরগ অংশ নিয়েছেন। মোজাম্মেল হকের বাড়ি গাজীপুর-২ সংসদীয় এলাকায় আর রাসেলের বাড়ি কালিয়াকৈর এলাকায়। ফলে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নৌকার ভোট ভাগ করতে জাহাঙ্গীর আলম আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। একইভাবে কালিয়াকৈর আঞ্চলিকতার একটি প্রবাহ তৈরি করে সেখানেও ভোট ভাগ করার জন্য রাসেল চেষ্টা করছেন।
নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের হাত ধরে বিজয়ী হওয়ার আশা করছেন রেজাউল। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী তার দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং বিগত সময়ে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমার কাছে তার (জাহাঙ্গীরের) কথার কোন মূল্য নেই। এলাকার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে।আমি আশা করি জনগণ ব্যালটের মাধ্যেমে সকল মিথ্যাচারের জবাব দেবে।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পুর্বে গাজীপুর-১ আসনটি শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। তখন এ আসনের আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন প্রয়াত এড. রহমত আলী আর বিএনপির নেতা ছিলেন চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে গাজীপুর-১ আসনটি ভাগ করে কালিয়াকৈর উপজেলা ও বাসন, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর (বর্তমান গাজীপুর সিটির ১৮টি ওয়ার্ড) নিয়ে গাজীপুর-১ এবং শ্রীপুর উপজেলা ও গাজীপুর সদরের ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গাজীপুর-৩ আসন গঠন করা হয়।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এইচএম কামরুল হাসান আরো জানান, গাজীপুর-১ আসনটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ নাম্বার ওয়ার্ড থেকে ১৮ নাম্বার ওয়ার্ড এলাকা অর্থাৎ গাজীপুর মহানগরীর বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৪ এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৮। এ আসনের কালিয়াকৈর উপজেলা এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৭ জন এবং গাজীপুর মহানগরী এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন। ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ২৩৭টি, বুথ সংখ্যা হলো ১৫১২টি।
এমন প্রেক্ষাপটে গাজীপুর ১ আসনে নবীন-প্রবীনের হাড্ডা হাড্ডী ভোটের লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন সাধারণ জনগণ।