অপরিকল্পিত রেস্তোরাঁয়া ঠাঁসা মোহাম্মদপুর
প্রকাশিত: ৭-৩-২০২৪ রাত ১০:৪০
চাইনিজ, মিনি চাইনিজ ও ক্যাফেসহ রয়েছে একাধিক বাংলা রেস্তোরাঁ।রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে বিভিন্ন সড়কে ও গলিতে গলিতে প্রতিটি আবাসিক বাড়ী বানিজ্যিক ভবনে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, তাজমহল রোড,নূরজাহান রোড,সলিমুল্লাহ রোড ও রিং রোড এলাকায় এমন কোন বাড়ী নেই যে বাড়ীটিতে ছোট বড় হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ খুঁজে পাওয়া যাবে না।রেস্তোরাগুলোতে নিরাপত্তার কোন বালাই নাই, নেই কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা।
এছাড়াও, হোটেল-রেস্তোরাঁর জন্য নেই সংশ্লিষ্টদের অনুমোদনও। বেইলি রোডের দূর্ঘটনার পর এসব অনুমোদনহীন হোটেল-রেস্তোরাঁ নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মোহাম্মদপুরের রিং রোডের শিয়া মসজিদ মোড়ে নূরানী টাওয়ারে বেশ কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট ও দোকান গড়ে ওঠেছে। পাশাপাশি, ভবনটির ওপরের অংশে একটি কওমী মাদরাসা রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, এ ভবটি একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবন।
যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ভবনটির দ্বিতীয় তলায় 'নবাবী ভোজ' রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার গ্যাসের লিকেজ থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৫ কর্মচারী গুরুতর আহত হয়ে তাদের মধ্যে ১জন নিহত হয়। একই রোডে ২৪/৬ ভবনটি ভয়াবহ ঝুকিপূর্ণ হিসেবে গড়ে ওঠেছে। এ ভবনটি পুরাতন একটি ভবন। এ ভবনের নিচ তলায় একটি এসি,ফ্রিজ ও টেলিভিশনের শো-রুম,দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্ট,৩য় তলায় জিম এবং চতুর্থ তলায় গোডাউন হিসেবে গড়ে উঠেছে।
পুরো ৪তলা এ ভবনটিতে ৩ ফিটের একটি সিঁড়ি ছাড়া জরুরী অবতরেন জন্য নেই কোন সিঁড়ি। পাশাপাশি, ভবনটিতে গড়ে ওঠা রেষ্টুরেন্টের রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাস নিচ তলায় ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় রাখা হয়েছে। যে জায়গায় সিলিন্ডার রাখা হয়েছে সেটিও আশেপাশে কয়েকটি ভবনের মাঝখানে এবং সিলিন্ডার বোতলের আশপাশে প্রায় অর্ধশত এসি রয়েছে। পাশের তাজমহল রোডে ২৩-২৪ ভবনটিতে টেক আউট রেষ্টুরেন্ট ,বেস্ট বাই শপ,কয়েকটি ব্যাংক,আন্ডারগ্রাউন্ডে সুপার শপ রয়েছে। ভবনটির ৫ তলা পর্যন্ত বানিজ্যিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এ ভবনটি নির্মান করেছে এইচআই ডেভেলপার্স নামে একটি ভবন নির্মান প্রতিষ্ঠান। ভবনটির ৫তলা থেকে আবাসিক হিসেবে ওপরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। বাসিন্দাদের মতে নিচে বানিজ্যিক হওয়ায় তারাও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে দিনপার করছেন। এ ভবনটির পাশেই আরেকটি ভবনের একই দশা। ওই ভনটির নিচ তলায় কেএফসি,দ্বিতীয় তলায় ব্যাংক এবং তৃতীয় তলায় মোঘল রেষ্টুরেন্ট, চতুর্থ তলায় ক্লাব মিক্স নামে আরেকটি রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। এ ভবনটির রেষ্টুরেন্টগুলোতে জরুরী অবতরনের জন্য সিঁড়িতে জেনারেটর ও সিঁড়ির পাশেই রাখা রেষ্টুরেন্ট গুলোর রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রায় কয়েক'শ গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনটির ৬ষ্ঠ তলা থেকে আবাসিক হিসেবে বেশ কয়েকটি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন। একই রোডে ১৫/৬ ঠিকানায় ২তলা পুরাতন একটি ভবনকে ওপরে কাঠ ও লোহার অবকাঠামো দিয়ে তৃতীয় তলায় উন্নীত করেছে।
বহু বছরের ২ তলা পুরাতন এ ভবনটি প্রায় ৭টি রেষ্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। এই ভবনটি স্থানীয়দের কাছে অধিক ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে পরিচিত। কারণ, ভবনটির নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় ৭ টি রেষ্টুরেন্টে ওঠানামার জন্য কাঠ দিয়ে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। জরুরী অবতরনের জন্য কোন সিঁড়িতো নাই পাশাপাশি ভবনটির নিচ তলায় ১৫-২০ ফুট ভিতরে চা-সিগারেটের দোকান তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, শ্যামলী স্কয়ারের উল্টা পাশে পিসি কালচার মোবাইল মার্কেট। যে ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে রেষ্টুরেন্ট,আবাসিক হোটলসহ প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে এ ভবনটি অগ্নিদূর্ঘটায় অধিক ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। এই ভবনটির রাস্তা ধরে সামনে এসে শ্যামলী মাঠের উল্টা পাশে ২৫/১৫ খিলজি রোডের ব্লক-বি তে ৯ তলা একটি ভবন।
এ ভবনের নিচ তলায় ক্রোকারিজ দোকান,দ্বিতীয় তলায় ব্যাংক এবং তৃতীয় তলায় একটি মদের বার রয়েছে। আবাসিক হিসেবে গড়ে ওঠা এই ভবনটির ৯তলায় আবাসিক হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে। একটি আবাসিক ভবনে কিভাবে মদের বারের মতো একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে। তা নিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। ভবনের বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে তারা যেকোন সময় ভয়ঙ্কর অগ্নিদূর্ঘটনার আতঙ্কের কথা জানান।
এসব ভবন ছাড়াও পুরো মোহাম্মদপুর এলাকা জুড়ে প্রতিটি গলি ও মূল সড়কগুলোতে প্রতিটি বাড়ির নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলায় নামে বেনামে হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেছে। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিনপার করছেন। বাড়িতে বাড়িতে বানিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা এসব রেষ্টুরেন্ট বন্ধ করে বাড়ীর মালিকের বিরুদ্ধে রাজউক কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ৩ এর পরিচালক তাজিনা সারোয়ার জানান, যেসব রেষ্টুরেন্ট গুলো আইনবহির্ভূত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় আমরা স্বশরীরে হাজির হয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।